- faridahmedreza
আমি রোজ কুরআন অধ্যয়ন করি (?)
Updated: May 7, 2020
কুরআন বুঝে পড়ার কথা আমি তাঁকে বলছিলাম। জবাবে তিনি আত্মতৃপ্তির সাথে বললেন,
- ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমি রোজ অর্থসহ কুরআন অধ্যয়ন করি।’
তিনি আমার পুরানো বন্ধু। নাম বলার দরকার নেই। আমি জানি, তিনি খুব ভালো মানুষ। নিয়মিত নামাজ-রোজা করেন। সততার সাথে জীবনযাপন করতে চেষ্টা করেন।
আমি বললাম, ‘আপনি কি কুরআনের ভাষা জানেন? মানে, আরবী ভাষা?’
- ‘না, ভাষা জানি না। আমার কাছে বাংলা এবং ইংরেজি তাফসির আছে। সেখান থেকে পাঠ করি।’
- ‘এ তাফসির যিনি লিখেছেন তিনি কি সঠিকভাবে এর অনুবাদ করতে পেরেছেন?’ আমি প্রশ্ন রাখলাম।
- ‘ অবশ্যই। এর লেখক ...... । কতবড় আলেম। দেশ-বিদেশে তাঁর কত সুনাম।’
- ‘তাঁর যোগ্যতা নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলছি না। আমার প্রশ্ন হলো, কুরআন অনুবাদ করার ক্ষমতা কি কারো আছে?’
- ‘তাঁর সে যোগ্যতা অবশ্যই আছে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।’
- ’কিন্তু আলেমগণ তো ভিন্ন কথা বলেন।’
- ‘আলেমগণ কী বলেন? ‘ তাঁর কন্ঠে প্রবল ঔৎসক্য।
আমি বললাম, ‘ আলেমগণ বলেন, কুরআনের অনুবাদ করা সম্ভব নয়। আমরা কুরআন পাঠ করে যা বুঝি এর অনুবাদ আমরা করি। এটাকে কুরআনের অনুবাদ না বলে ‘ভাবের অনুবাদ বলা-ই যুক্তিযুক্ত।
- ‘কথাটা পরিষ্কার হয়নি। আরেকটু ব্যাখ্যা করুন।’ তাঁর কন্ঠে আকুতি ঝরে পড়ে।
- ’কারো মাতৃভাষা যদি আরবী হয় তা হলেও তাঁর পক্ষে কুরআনের অনুবাদ করা সম্ভব নয়। এর অনেক কারণ আছে।’
- ‘দুয়েকটা কারণ বলুন।’
- ‘প্রথমতঃ কুরআন যখন নাজিল হয় তখন রচনা-শৈলী এবং শব্দ-সম্ভারের দিক দিয়ে আরবী ভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষা ছিল। এখনো আরবী ভাষার সে ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এর বাক-বিন্যাস এমন যে একটি বাক্য বা বাক্যাংশ একই সাথে বহু অর্থ ধারণ করতে পারে। অনেক সময় কোন অর্থকেই মূল টেক্সট থেকে বিচ্ছিন্ন করার উপায় থাকে না। পৃথিবীর কোন ভাষার এক সাথে এগুলো ধারণ করার ক্ষমতা নেই। দ্বিতীয়তঃ আরবী ভাষা শব্দ-সম্ভার এবং প্রতিশব্দের দিক দিয়ে এতটা সমৃদ্ধ যে কোন কোন বিষয়ের দু‘ থেকে আড়াইশ’ প্রতিশব্দ আছে। প্রতিটি প্রতিশব্দ স্বতন্ত্র এবং বিশিষ্ট। ইংরেজি ভাষায় অনেক প্রতিশব্দ আছে। বাংলাভাষার প্রতিশব্দ খুবই সীমিত। কুরআনের প্রতিটি শব্দ এবং বাক্যের মধ্যে এর অবস্থান একটি বিশেষ অর্থ বহন করে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অনুবাদের সময় তা হারিয়ে যায়। তাই কুরআনের কোন অনুবাদকেই কুরআনের অনুবাদ বলা ঠিক নয়। ভাবানুবাদ বলাই যুক্তি-সঙ্গত।’
- ‘তা হলে আমার কুরআন অধ্যয়নের কী হবে?’ তিনি হতাশ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।
- ‘আল্লাহর কালাম বুঝতে চাইলে এর ভাষা জানা ছাড়া কোন পথ নেই। অনুবাদ পড়া মানে কুরআন অধ্যয়ন নয়।’ আমি জবাব দিলাম।
আমি ভাবছিলাম, তাঁর প্রশ্ন হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। তিনি আরো কঠিন একটি প্রশ্ন ছোঁড়ে দিলেন।
বললেন,
- ‘কিন্তু যারা কুরআনের ভাষা না জেনে ইসলামের ব্যাখ্যা দেয় তাদের কী হবে?’
আমি বিনীত কন্ঠে বললাম, ‘দুঃখিত, এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।’
